কোন এক জরুরি কাজে চট্টগ্রাম থেকে কয়েক ঘন্টা সময় নিয়ে যেতে হয়েছিল ফেনী।
যাওয়ার সময় আমার চিরাচরিত অভ্যাসবশত গুগল ম্যাপ ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফেনীর নিকস্থ
ঐতিহাসিক, দর্শনীয় ও ছায়াঘেরা স্থান খুঁজছিলাম। দেখলাম ফেনীতে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান
রয়েছে। তন্মধ্যে বিজয় সিংহ দীঘি দেখার ইচ্ছা মনের মাঝে উঁকি দিল। তাই জরুরি কাজটি শেষ
করেই যাত্রা করলাম দীঘির উদ্দেশ্যে।
যেভাবে গিয়েছি: দীঘিটি ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের কাছেই অবস্থিত। প্রথমে ফেনীর মহিপাল নেমে সার্কিট হাউজ রোড ধরে ৪/৫ মিনিট হেঁটেই পৌঁছে যাই। মহিপালে নেমে যেকাউকেই বলেন না কেন সার্কিট হাউজ রোড দেখিয়ে দিবে। আর সার্কিট হাউজের সামনেই অবস্থিত দীঘিটি।
দীঘির ইতিহাস ও বর্ণনা: বিজয় সেন যিনি ছিলেন সেন বংশের প্রতিষ্ঠাতা তারই অমর কীর্তি এই বিজয় সিংহ দীঘি। এটি ফেনী শহর থেকে ২ কি.মি. পশ্চিমে বিজয় সিংহ গ্রামে অবস্থিত। দীঘির আয়তন ৩৭.৫৭ একর। এর চারপাশ গাছপালায় আচ্ছাদিত উঁচু পাড় দ্বারা বেষ্টিত।
১৯৯৫ সালে ফেনীর প্রাক্তন জেলা প্রশাসক পুকুর পাড়ে বৃক্ষরোপণ করে সৌন্দর্য বর্ধন করেন। কয়েক বছর আগে পাড়ের ভিতরদিকে পানি থেকে কয়েক ফুট উঁচু করে পাকা রাস্তা নির্মাণ করা হয়। ফলে পাড় ধরে হেঁটে পুকুরের সৌন্দর্য উপভোগ করার সুবিধা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। পুকুরে পানকৌড়ি ও মাছরাঙা পাখির দেখা মেলে। আর স্বচ্ছ জলে মাছগুলো দেখলে ধরতে ইচ্ছে করে! তবে এই স্বচ্ছ জল আর কতদিন টিকবে তা বলা মুশকিল। উঁচু পাড়গুলো ভেঙ্গে যাচ্ছে। পানিতে ময়লা-আবর্জনা জমতে শুরু করেছে।
পুকুরের পূর্ব পাড়ে আছে গোল্ডেন শিশু পার্ক। সার্কিট হাউজ সংলগ্ন পাড়ের গাছের নিচে ফুসকা, চটপটির দোকান বসে। তাছাড়া দর্শনার্থীদের বসার সুব্যবস্থাও আছে।
আবাসন: ফেনীতে থাকতে চাইলে সার্কিট হাউজ, জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি রেস্ট হাউস ইত্যাদিতে থাকতে পারবেন।
দেশের প্রতিটি জেলা উপজেলাতেই কোন না কোন ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সৌন্দর্যের সন্ধান পাওয়া যায়। ফেনীও তার ব্যতিক্রম নয়। যদি হাতে সময় নিয়ে যাওয়া যায় তবে সেখানে রাজাঝির দীঘি, মুহুরী সেচ প্রকল্প, নিহাল পল্লী, শিলুয়ার শিল পাথর, তৃপ্তি এগ্রো পার্ক, গোল্ডেন শিশু পার্ক ইত্যাদি দেখার সুযোগ মিলবে। তবে সময়ের অভাবে এবার মাত্র একটিই দেখে এলাম।