চট্টগ্রাম ঘুরতে আসলে অনেক দর্শনীয় স্থান পাবেন। সৌন্দর্যে আর ইতিহাস ঐতিহ্যে ভরপুর চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থান। এখন এমনই এক ঐতিহাসিক স্থানের কথা বলছি যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিবহন করছে।
স্মৃতিবহনকারী স্থানটির নাম হচ্ছে কমনওয়েলথ ওয়ার সেমেট্রি
চট্টগ্রাম (Commonwealth War Cemetery Chittagong)। তবে সর্বসাধারণের কাছে চট্টগ্রাম
ওয়ার সেমেট্রি নামেই পরিচিত।
যেভাবে যাবেন:
চট্টগ্রামের জিইসি
মোড় থেকে সোজা পূর্বদিকে কিছুক্ষণ হাঁটলে দেখতেপাবেন ১৯ নং বাদশা মিয়া চৌধুরী সড়ক।
সড়কটি দিয়ে এক মিনিট হাঁটলেই চোখে পড়বে ওয়ার সেমেট্রি।
অবস্থান আরো স্পষ্ট করে দিচ্ছি। এটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ, চট্টেশ্বরী সড়কের চারুকলা ইন্সটিটিউট এবং ফিনলে গেস্ট হাউজের কাছাকাছি পাহাড়ী ঢালু, সমতল, নিরিবিলি পরিবেশে অবস্থিত।
আবার শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে ২২ কি.মি. উত্তর এবং চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৮ কি.মি. দূরে অবস্থিত। বাস, রিকশা, অটোরিকশাযোগে সহজেই যাওয়া যায় সেখানে।
ইতিহাস:
প্রবেশপথ দিয়ে তাকালে
দেখবেন ঠিক মাঝখান বরাবর রয়েছে ক্রুশযুক্ত স্মৃতিসৌধ। যার পিছনদিকে আছে প্রার্থনা ঘর।
এই প্রার্থনা ঘরের দেয়ালে স্টিলের ফলকে দর্শনার্থীদের জন্য ইংরেজি ও বাংলায় লেখা আছে
ইতিহাস। জানা যায়, ১৯৩৯-১৯৪৫ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন গভীর জলের পোতাশ্রয় ছিল
একাধারে আরাকানে সামরিক তৎপরতার একটি অগ্রবর্তী ঘাঁটি এবং একটি উল্লেখযোগ্য হাসপাতাল-কেন্দ্র।
মূলত হাসপাতালে মৃতদের জন্যে এই সেমেট্রি সৃষ্ট হলেও অনেকগুলি বিচ্ছিন্ন ক্ষেত্র থেকে শবদেহ গ্রহণের উদ্দেশ্যে সমাধি ভূমিটি সম্প্রসারিত করা হয়। সেখানে ৭৫১টি সমাধিতে রয়েছে ১৪ জন নাবিক, ৫৪৩ জন সৈনিক ও ১৯৪ জন বৈমানিকগণ। সমাধিস্থলে যুদ্ধকালীন সময়ের সমাধি ছাড়া আরো ৪টি কবর রয়েছে।
যুদ্ধে নিহত ব্যক্তিগণ যে সব দেশের বাহিনীতে কর্তব্যরত ছিলেন, সেগুলো হচ্ছে:
- যুক্তরাজ্য - ৩৭৮
- কানাডা - ২৫
- অস্ট্রেলিয়া - ৯
- নিউজিল্যান্ড - ২
- অবিভক্ত ভারত - ২১৪
- পূর্ব আফ্রিকা - ১১
- পশ্চিম আফ্রিকা - ৯০
- বার্মা - ২
- নেদারল্যান্ডস - ১
- জাপান - ১৯
(অবিভক্ত ভারত বলতে বর্তমানে যে অঞ্চল নিয়ে ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ গঠিত সে এলাকাকে বুঝানো হয়েছে।)
এই সমাধিক্ষেত্রের প্রবেশ পথে বিরাজমান চট্টগ্রাম স্মৃতিপীঠ, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কালে রাজকীয় ভারতীয় নৌবাহিনী ও বাণিজ্য বহরের সমুদ্রবক্ষে বিলুপ্ত ৬,৪৬৯ জন নাবিকের নামোল্লেখ পূর্বক তাদের স্মৃতি সংরক্ষণ করছে।
স্মৃতিফলকে ১৯৪১-১৯৪৫ সালের বার্মা যুদ্ধেরও ইতিহাস তুলে ধরা আছে। জানা যায়, যুদ্ধে ৪৫ হাজার কমনওয়েলথ সৈনিক (যার মধ্যে প্রায় ২৭ হাজার জন ছিলেন ভারতীয় বাহিনীর) প্রাণ দিয়েছেন, তাদের স্মৃতি সংরক্ষিত হয়েছে বার্মা, আসাম ও বাংলাদেশের নয়টি রণ সমাধি ক্ষেত্রে মৃতদের শিয়রে স্থাপিত প্রস্তরফলকে কিংবা শ্মশানের স্মৃতিফলক অথবা, যে ক্ষেত্রে বিদিত কোন সমাধি নেই, সে ক্ষেত্রে রেঙ্গুন (সৈনিকদের) ও সিঙ্গাপুরস্থ (বিমানসেনাদের) স্মৃতিপীঠে।
কমনওয়েলথ যুদ্ধ সমাধি কমিশন এই সমাধি ক্ষেত্র এবং স্মৃতিসৌধ তৈরি করেন এবং বর্তমানে এর রক্ষণাবেক্ষণ করছেন।
খোলার সময়:
প্রতিদিন সকাল ৮টা
থেকে ১২টা এবং দুপুর ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। হরতালে গেট বন্ধ থাকে।
সতকর্তা:
ক্যামেরা দিয়ে ছবি
তোলা যায়। তবে কাপড় পরিবর্তন, শুয়ে ও বসে ছবি তোলা যাবে না। দর্শনার্থীদের বসা নিষেধ।
নিরবতা বজায় রাখবেন। সেখানে লেখা আছে, মনে রাখবেন এটি একটি কবরস্থান।