খুব সকালে যারা ঘুম থেকে ওঠেন, তারা দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা ব্যক্তিদের চেয়ে বেশি সফল। সম্প্রতি এক জরিপে এমনই দেখা গেছে। কে না চায় বলুন সফল হতে! কিন্তু ঘুম কি সেটা বোঝে!
সকালে যতই বিছানা ছাড়তে চান, বিছানা তো আপনাকে ছাড়তে নারাজ। এই ঘুম থেকে সময়মতো উঠতে না পারার জন্য কতজনের যে চাকরি গেছে, ক্লাস করতে পারেননি, পরীক্ষা মিস হয়ে গেছে, তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু ঘুমকে জব্দ করবেন কীভাবে!
এমন সমস্যায় থাকা ঘুমকাতুরেদের জন্যই আমেরিকান একাডেমি অফ স্লিপ মেডিসিন-এর মুখপাত্র এবং ভার্জিনিয়ার মার্থা জেফারসন হসপিটাল স্লিপ মেডিসিন সেন্টার-এর মেডিকেল ডিরেক্টর ডা. ডব্লিউ ক্রিস্টোফার উইন্টার বেশ কয়েকটা উপায় বাতলে দিয়েছেন। দেখুনতো কাজ হয় কি না-
- আপনি ঘুম থেকে সকালে উঠবেন নাকি দুপুরে
উঠবেন তা নির্ধারিত হয় জিনগতভাবে। একটি পরিবারের সবাই একই জিনের অধিকারী
হতে পারে। তার মানে এটা অনেকটা বংশগত। তবে একে একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত
নিয়ন্ত্রণও করা যায়। তারপর আপনি যেভাবে চাইবেন সেভাবেই গড়ে নিতে পারবেন
অভ্যাস।
- আমাদের শরীর রুটিন মেনে চলতে পছন্দ করে।
কথায় আছে শরীরের নাম মহাশয়, যা সওয়াবেন তা-ই সয়। প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠা,
ব্যায়াম ও খাওয়া একই সময়ে রাখবেন।
- জোর করে ঘুমাবেন না। শরীর নিজেই ক্লান্ত
হয়ে ঘুমানোর সময় বেছে নেবে। গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো, জেগে থাকার সময় ঘুমিয়ে
না পড়া। অর্থাৎ ঘুমানোর সময়ে ঘুমাতে হবে। এটা কোনো কারণে পরে হতে পারে, তবে
আগে নয়। কারণ আগে একটু ঘুমালে ঘুমানোর সময় ভালো ঘুম হবে না।
- ছুটির দিনে সাধারণত রুটিন বদলে যায়।
অফিসে যাওয়ার কোনো তাড়া থাকে না বলে দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা হয়। এটা কখনই করা
যাবে না। কেননা, এর মাধ্যমে শরীরকে এই বার্তা দেওয়া হয় যে, সপ্তাহের বাকি
দিনগুলোয় ঘুম ভাঙার রুটিনটি আসলে অস্থায়ী এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রুটিন
মেনে চলতে হবে। সুতরাং ছুটির দিনেও একই সময়ে ঘুম থেকে উঠুন, এমন কি আগের
রাতে ঘুমাতে যেতে দেরি হলেও। মোট কথা রুটিনের হেরফের করা যাবে না।
- সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে চাইলে অ্যালার্ম
দিয়ে রাখতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন ভুলেও অ্যালার্ম বন্ধ করে আবার
ঘুমাবেন না। তাহলে এক ঘুমে দেখবেন আপনি ঘণ্টাখানেক পিছিয়ে যাবেন। তাই
অ্যালার্ম বেজে ওঠা মাত্রই উঠে পড়ুন। তবে তাড়াহুড়ো করে নয়।
- শোবার ঘরে দিনের আলো আসতে দিন। খুব সকালে
ঘুম থেকে উঠতে ঘরে আলোর উপস্থিতি অত্যন্ত জরুরি, কেননা আলোর উপস্থিতি
মস্তিষ্কের কাছে বার্তা পৌঁছে দেয় যে, সকাল হয়েছে। এখন ঘুম থেকে উঠতে হবে।
আলো আপনার ঘুম ভাঙাতে সাহায্য করবে।
- ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ব্যায়াম করুন। এক
গ্লাস পানি পান করুন। ব্যায়াম শরীরকে জাগিয়ে তোলার সবচেয়ে ভালো উপায়। তাই
ঘুম থেকে উঠে ব্যায়াম করুন। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপালেশিয়ান স্টেট
ইউনিভার্সিটির গবেষকদের মতে, সকালের ব্যায়াম রক্তচাপ কমায়, মানসিক চাপ ও
উদ্বেগ কমায়। শুধু তাই নয় সকালের ব্যায়াম রাতের ঘুম ভালো করতে সাহায্য করে।
ভোরের হালকা উজ্জ্বল আলোতে ব্যায়াম করা সবচেয়ে ভালো। সকালে দৌড়, সাইক্লিং
বা জগিং হতে পারে চমৎকার ব্যায়াম।
- ঘুমানো ও ঘুম থেকে জাগতে খাবারের ভূমিকাও
গুরুত্বপূর্ণ। আমিষসমৃদ্ধ খাবার জেগে থাকতে সাহায্য করে। আর শর্করা ঘুমাতে
সাহায্য করে। আমিষ খাবার আপনাকে সারাদিন চাঙ্গা রাখবে।
- ঘুমানোর জন্য তাড়াহুড়ো করবেন না। প্রথম
কয়েকদিন আগে আগে ঘুমানো কঠিন মনে হতে পারে। আস্তে আস্তে অভ্যাস গড়ে তুলুন।
দেখবেন অভ্যাসই আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করছে।
উপরের বিষয়গুলো চেষ্টা করার আগে মনে রাখবেন, যে পদ্ধতিই অনুসরণ করবেন, তার জন্য কয়েকটা দিন নিজেকে মানিয়ে নিতে সময় দেওয়াটা জরুরি। কখনই মনের ওপর জোর খাটাবেন না।
এখানে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার স্বত্ত্ব ও দায় লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত। আমাদের সম্পাদনা পরিষদ প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে এখানে যেন নির্ভুল, মৌলিক এবং গ্রহণযোগ্য বিষয়াদি প্রকাশিত হয়। তারপরও সার্বিক চর্চার উন্নয়নে আপনাদের সহযোগীতা একান্ত কাম্য।
যদি কোনো নকল লেখা দেখে থাকেন অথবা কোনো বিষয় আপনার কাছে অগ্রহণযোগ্য মনে হয়ে থাকে, অনুগ্রহ করে আমাদের কাছে বিস্তারিত লিখুন।