শীতকাল প্রায় চলেই এসেছে। শীতকাল টা অনেকেই খুব পছন্দ করে। সতেজ এবং ঝরঝরে থাকা যায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এই শীতকালেই আমাদের ত্বক আর্দ্রতার অভাবে হয়ে উঠে রুক্ষ, শুষ্ক এবং প্রাণহীন। তাই শীতকাল আসার আগে অনেকেই কোল্ড ক্রিম এবং লোশনের দিকে গুরুত্ব বাড়িয়ে দেন।
তবে আমরা চাইলেই কিন্তু ঘরে থাকা সহজলভ্য বিভিন্ন উপাদানের মাধ্যমে শীতকালে ত্বকের যত্ন নিতে পারি। তাই এই সময়ের ত্বকের যত্নে ঘরোয়া কিছু উপায় এখানে জানানোর চেষ্টা করছি যা নিয়মিত ব্যবহারের পর আপনিই আপনার ত্বকের প্রেমে পড়ে যাবেন।
শীতকালের ত্বকের যত্নের কিছু ঘরোয়া ফেস প্যাক এবং মাস্ক:
পেঁপের ফেস প্যাক:
পাঁকা পেঁপের সাথে
পাঁকা কলা নিয়ে নিয়ে খুব ভালোভাবে চটকে নিন। মিশ্রণে ২ টেবিল চামচ মধু যোগ
করুন। এবার সেই মিশ্রণ মুখে ও শরীরে মেখে নিন। ২০ মিনিট রেখে কুসুম গরম পানি দিয়ে
ধুয়ে ফেলুন।
পেঁপেতে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং কলাতে থাকে অ্যান্টি অ্যাজিং বৈশিস্ট্য সম্পন্ন ভিটামিন। আর মধু হচ্ছে প্রাকৃতিক ময়েশ্চেরাইজার। তাই এই প্যাক ব্যবহারের ফলে ত্বক পুনর্গঠিত হয়, নরম এবং তারুন্যদীপ্ত হয়।
দুধ এবং কাঠ বাদামের
ফেস প্যাক:
১ টেবিল চামচ কাঠ
বাদাম গুঁড়া এবং ২ টেবিল চামচ কাঁচা দুধ দিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এবার এটি মুখে মেখে
১০ মিনিট রাখুন। তারপর আস্তে আস্তে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন।
কাঠ বাদামে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ই এবং দুধ ত্বকের জন্য খুবই ভাল একটি ময়েশ্চেরাইজার। এই প্যাক ব্যবহারের ফলে ত্বকের শুষ্কতা কমে গিয়ে ত্বককে করে নরম ও কোমল।
টক দই এবং মাঠার ফেস
প্যাক:
সমপরিমান টকদই এবং
মাঠা নিয়ে ভাল করে মিশিয়ে পুরো শরীরে লাগান। ২০ মিনিট রাখুন তারপর কুসুম গরম
পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
টক দইয়ে থাকে জিংক ছাড়াও প্রয়োজনীয় এনজাইম। আর মাঠাতে রয়েছে ল্যাক্টিক এসিড যা ত্বকের মরা কোষ দূর করে ত্বকের শুষ্কতা এবং মলিনতা দূর করতে সাহায্য করে।
গ্লিসারিন:
খুবই সহজলভ্য একটি
উপাদান হচ্ছে হচ্ছে গ্লিসারিন। যা শুষ্ক ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারে।
এটা হচ্ছে প্রাকৃতিক ময়েশ্চেরাইজার এবং এটা ত্বককে নরম ও কোমল করে ত্বকের আর্দ্রতা
ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। এটা শীতকালের ত্বকের যত্নের জন্য একটি উত্তম ঘরোয়া
উপাদান।
পেট্রোলিয়াম জেলি:
খুব
সহজে পাওয়া যায় এবং খুবই সাশ্রয়ী একটি উপাদান হচ্ছে পেট্রোলিয়াম জেলি। এটা শীতকালে
শুষ্ক ত্বক থেকে শুরু করে শুষ্ক ঠোঁট এমনকি ফাটা গোড়ালিতেও ব্যবহার করতে পারেন। পেট্রোলিয়াম
জেলির রয়েছে ময়েশ্চেরাইজার গুনাগুন যা ত্বকের শুষ্কতার সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে।
অলিভ ওয়েল এবং ডিমের
কুসুমের ফেস মাস্ক:
২টি ডিমের কুসুমের
সাথে ২ ফোঁটা অলিভ ওয়েল খুব ভাল করে ফেটে মিশিয়ে নিন। এবার মিশ্রণটি মুখে মেখে ২০
মিনিট রাখুন। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
অলিভ ওয়েলে আছে প্রচুর প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ই এবং কে। আর ডিমের কুসুমে আছে ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি। শীতকালে উজ্জ্বল ত্বক পেতে এই ফেস মাস্ক সপ্তাহে ২ দিন ব্যবহার করুন।
অ্যাভোকাডো এবং মধুর
ফেস মাস্ক:
অর্ধেক অ্যাভোকাডো চটকে
নিয়ে তাতে ২ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে মুখে মাখুন। এটি ২০ মিনিট রাখুন মুখে তারপর
ধুয়ে ফেলুন। অ্যাভোকাডো এবং মধুর উভয়েই ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে সাহায্য করে।
নারিকেল তেল:
নারিকেল তেল ত্বককে
নরম করে এবং প্রাকৃতিকভাবে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে ভাল
ধরনের ফ্যাটি এসিড যা ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
মধু এবং লেবুর রসের
মিশ্রণ:
২ টেবিল চামচ মধুর
সাথে অর্ধেকটা লেবু চিপে রস বের করে ভালো করে মিশিয়ে নিন। একটি তুলার বল দিয়ে
মিশ্রণটা মুখে লাগান। ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
লেবুতে থাকে ভিটামিন সি এবং মধুর প্রদাহ বিরোধী গুনাগুনের জন্য শীতকালের শুষ্ক ফাটা ত্বকে মসৃনতা আনতে সাহায্য করে।
সূর্যমুখীর তেল:
শীতকালের ত্বকের যত্নে
একটি কার্যকরী ঘরোয়া উপায় হচ্ছে সূর্যমুখীর তেল। কারন এই তেলটি প্রচুর ভিটামিন এবং
ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ। তাই ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে এবং তারুণ্য ধরে রাখতে এই তেলের
ভূমিকা অনন্য।
শীতকাল যেহেতু চলেই আসছে তাই আজ থেকে শুরু করে দিন ত্বকের যত্ন, আর তা এসব ঘরোয়া উপাদানের মাধ্যমে এবং পুরো শীতকাল জুড়েই থাকুন তারুণ্য উজ্জ্বল ত্বক নিয়ে।
তবে এই ফেস প্যাক বা মাস্ক গুলো যে গরমকালে ব্যবহার করা যাবে না তা নয়। ত্বকের যত্নে চাইলে সারা বছরই ব্যবহার করতে পারবেন।
-
লেখক: জনস্বাস্থ্য পুষ্টিবিদ; এক্স ডায়েটিশিয়ান,পারসোনা হেল্থ; খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান (স্নাতকোত্তর) (এমপিএইচ); মেলাক্কা সিটি, মালয়েশিয়া।